Friday, December 21, 2018

লিভার সিরোসিসঃ


লিভার সিরোসিস মানুষের যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী রোগের ফল যা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে সৃষ্টি হতে পারে এবং মারাত্মক পর্যায়ের সিরোসিসে যকৃৎ এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সিরোসিসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে যকৃতের সুস্থ-সবল কলা (tissue) ক্ষয়যুক্ত কলা বা নডিউল (nodule) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায় ফলে যকৃত আর কাজ করতে পারে না। সিরোসিসের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং যকৃতে সংক্রমণ ছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ অতিরিক্ত মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ফ্যাটি লিভার রোগ ইত্যাদি। তবে সিরোসিসের প্রধান কারণ দেশ অনুযায়ী ভিন্ন হয়। যেমন ইউরোপ এবং আমেরিকায় সিরোসিস হয় প্রধানতঃ মদ্যপানের ফলে আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের আক্রমনে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে প্রধানতঃ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রমণ আর ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিসের পেছনে দায়ী। এছাড়াও আরও অজানা কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে।

লিভার সিরোসিসের লক্ষণঃ


লিভার সিরোসিসের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে লক্ষণ অনেকের ক্ষেত্রে বোঝা যায় না। কোনো লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে লিভারের মধ্যে প্রদাহ হতে থাকে। তবে এটি যদি বেড়ে যায়, তখন দেখা গেছে কারো পেটে পানি চলে আসে বা পায়ে পানি আসতে পারে। তার ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে। শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে সাধারণত লিভার সিরোসিসের রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসে।

প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝার কোনো সম্ভাবনা না থাকলে।দুভাবে বোঝা যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসের রোগীদের ক্ষেত্রে জন্ডিস দেখা দিতে পারে। অথবা অন্য কোনো কারণে হয়তো সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েছে, এই অবস্থায় তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়েও এটি ধরা পড়তে পারে।

কীভাবে আপনি বুঝবেন ?

Ø  প্রথমে শারীরিকভাবে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এর দ্বারা বোঝা যায় এই অসুখের লক্ষণ তার মধ্যে আছে কিনা। এর পাশাপাশি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় যে কী কারণে তার লিভার সিরোসিস হয়েছে।এখানে দুটো বিষয়। একটি হলো তার কারণ দেখা। আরেকটি হলো সিরোসিস রোগের কতটুকু কোন অবস্থায় আছে। সেগুলো দেখার জন্য আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। এর মধ্যে কিছু রক্তের পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোস্কোপি করা হয়। এগুলো করে আমরা তার অসুখের মাত্রা নির্ণয় করি। কারণটিও খুঁজে নিই। কারণের ওপর নির্ভর করছে চিকিৎসাটি। চিকিৎসা দুই ধরনের। কারণ নির্ণয় করতে পারলে সেটার চিকিৎসা করা হবে। পাশাপাশি লক্ষণ যে প্রকাশ পাচ্ছে বা সিরোসিসের যে জটিলতা হচ্ছে, সেই জটিলতাগুলো কমানোর জন্যও কিছু কিছু চিকিৎসা করা হয়।


Thursday, December 20, 2018

কিডনি সুস্থ রাখে যেসব খাবারঃ


বর্তমান সময়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে কিডনি রোগের সমস্যা।আমাদের নিজেদের কিছু অসতর্কতার জন্যই দেখা দেয় এই ধরণের সমস্যা যা পরবর্তীতে কিডনি ড্যামেজের কারণ হয়ে দাড়ায়। তবে কিছু খাবার আছে যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আসুন জেনে নেই সেই খাবারগুলো সম্পর্কে।
১) আপেলঃ
আপেল হচ্ছে উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, এতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি আছে যা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়াও এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আপেল কাঁচা বা প্রতিদিন এক গ্লাস আপেলের জুস করে খাওয়া কিদনির জন্য অনেক উপকারি।
২) ডিমের সাদা অংশঃ
ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং অ্যামিনো এসিড আছে যা কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে কিডনিকে সুস্থ রাখে। ডিম সিদ্ধ করে বা অমলেট করে খাওয়া যেতে পারে।
৩) মাছঃ
২০০৮ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কিডনি ডিজিসের মতে, মাছ দেহে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা প্রদাহ হ্রাস করে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখে।
৪) লাল ক্যাপসিকামঃ
লাল ক্যাপসিকামে পটাশিয়াম কম পরিমাণে থাকে তবুও এটি কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন সি, এ, ভিটামিন বি সিক্স, ফলিক এসিড, ও ফাইবার রয়েছে। এছাড়া লাইকোপেন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। রান্না বা সালাদ হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লাল ক্যাপসিকাম খেতে পারেন।

৫) বাঁধাকপিঃ
বাঁধাকপি কিডনি ফাংশন উন্নত করে থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি সিক্স, সি, কে, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড। এটি শরীরের পটাসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। রান্না করে খেতে পারেন সালাদ করেও খাওয়া যেতে পারে।
৬) পেঁয়াজঃ
কিডনিকে সুস্থ রাখার আরেকটি অন্যতম উপাদান হল পেঁয়াজ। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনোয়েড রয়েছে যা রক্তের চর্বি দূর করে থাকে। এছাড়া এতে কুয়ারসেটিন আছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে থাকে। পেঁয়াজে প্রোটিন, পটাশিয়াম আছে যা কিডনির জন্য অনেক বেশি উপকারী।
৭) রসুনঃ
রসুন ইনফ্লেমেটরি এবং কোলেস্টেরল কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা দেহের প্রদাহ দূর করে থাকে। তবে রান্না করে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় না। ভাল হয় সকালে খালি পেটে কাঁচা রসূন খাওয়া, এটি হার্ট ভাল রাখার পাশাপাশি কিডনিকেও ভাল রাখে।
8) অলিভ অয়েলঃ
অলিভ অয়েল হৃদস্বাস্থ্য সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনিও ভালো রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণ ওলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা অক্সিডেসন কমিয়ে কিডনি সুস্থ রাখে।এটিও রান্নায় বা সালাদে ব্যবহার করা যেতে পারে।

Friday, December 7, 2018

মেরুদন্ডের ব্যথার প্রধান কারণ ও সমাধানঃ


মেরুদন্ডের ঘাড়, পিঠ ও কোমরের ব্যথার অভিজ্ঞতা কম বেশি আমাদের মধ্যে সকলের আছে। আঘাতহীন ব্যথার জন্য প্রথমে মেরুদন্ডে হালকা ব্যথা হলেও পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরের অন্য কোনো অংশে। সেই জন্য মেরুদন্ডের ব্যথায় সবার আগে প্রয়োজন সঠিক রোগ নির্ণয়। তা না হলে বাড়তে থাকবে রোগীর যন্ত্রণা। 


মেরুদন্ডের গঠন অনুযায়ী মাথার খুলির নীচ থেকে প্রথম ৭টি হাড় বা কশেরুকা নিয়ে ঘাড়, পরবর্তী ১২টি হাড় নিয়ে পিঠ, তার নিচের ৫টি হাড় নিয়ে কোমড় গঠিত।
মেরুদন্ডের সমস্যায় ঘাড়ে যে সকল লক্ষন দেখা দেয়ঃ
• ঘাড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পরা
• হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিন-ঝিন করা
• ধীরে ধীরে হাত দূর্বল হয়ে হাতের কার্য ক্ষমতা লোপ পাওয়া
• দাড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
• প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা

কোমরে ব্যথার লক্ষন সমূহঃ
• পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিন-ঝিন করা
• পায়ের বোধ শক্তি কমে আসা পর্যায়ক্রমে পায়ের অসারতা
• দাড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
• ধীরে ধীরে পা দূর্বল হয়ে পায়ের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া
• কোমড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া
• পায়ের নিতম্ব ও পায়ের মাংস পেশীতে ব্যথা
• চুড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা, এছাড়াও বসা ও দাড়ানো অবস্থায় পিঠে ব্যথা এবং পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে
নানান কারনে মেরুদন্ডের ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে। মেরুদন্ডের হাড় গুলির ভিতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কোন অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ঐ স্নায়ু মুলেও সেখান থেকে বেড়িয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরন ক্ষেত্রে ব্যথা হয়। এই ধরনের ব্যথা কে বলা হয় মেরুদন্ডের হাড়ের ক্ষয়। প্রকৃত পক্ষে মেডিক্যাল টার্মে এই জটিলতাকে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স / হার্নিয়েটেড ডিস্ক/ স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়।
এই রোগে অতিরিক্ত যন্ত্রনায় রোগীরা সাধারণত ব্যথানাশক ঔষধের উপর নির্ভর করে সাময়িক ব্যথা মুক্তির চেষ্টা করে কিন্তু নিয়মিত এই ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়ার ফলে কিডনী বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ঘাড়, পিঠ ও কোমরের এই ব্যথা অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।