Friday, June 14, 2019

ফুসফুসের কাজঃ


§ ফুসফুস মানব দেহের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আমাদের বুকের বাম দিকে রয়েছে হৃৎপিণ্ড এবং হৃৎপিণ্ডের দুপাশ জুড়েই রয়েছে এর অবস্থান। ফুসফুসের প্রধান কাজ হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করা।
ü ফুসফুসের কাজঃ 

১) আমাদের নাকের মাধ্যমে ঢুকে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে দেহের বাইরে বের করে দেয়।

২) ফুসফুস আমাদের মস্তিষ্কে দূষিত বায়ু প্রবেশে বাধা দেয় এবং বিশুদ্ধ বায়ু প্রেরণে ভূমিকা রাখে।




ü শ্বাসতন্ত্রের সমস্থ রোগের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক রোগ।

§ কারণঃ
ধূমপান (শতকরা ঌ০ ভাগ ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী)। তাই ধূমপান কমালে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার হার কম হয়ে যাবে। মহিলাদের সিগারেট খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একজন অধূমপায়ী অপেক্ষা একজন ধূমপায়ীর ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ভয় থাকে ৪০ গুণ বেশি। যে যত বেশি ধূমপান করে তার তত বেশি ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ভয় থাকে। ধূমপায়ীদের সঙ্গে যারা চলাফেরা করে তাদেরও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্বামী অথবা স্ত্রী একজন ধূমপায়ী হলে অন্যজনের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
লক্ষনঃ

ü ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি কফ, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট।
১) কফ ও কাসিঃ কফ এ ধরণের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। কফ প্রথমে শুষ্ক থাকে কিন্তু পরবর্তীকালে তা গাঢ় হয়ে যায়। যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের কফের আওয়াজ অথবা গতি-প্রকৃতি যদি হঠাৎ বদলে যায় তবে বুকের এক্স-রে করা উচিত। ৪০ বছর বয়সের বেশি কারও যদি হঠাৎ করে কফ হয় আর তা দীর্ঘ দিনেও যদি সারতে না চায় তবে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

২) কাশির সাথে রক্ত পড়াঃ কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের আরেকটি প্রধান উপসর্গ এটি হিমোপটেসিস নামেও পরিচিত। সাধারণত কফের সঙ্গে একটু একটু করে রক্ত যায়। তবে ফুসফুসের ভেতর কোনও বড় শিরা বা ধমনি ছিঁড়ে গেলে মারাত্মক রক্তপাত থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৩) শ্বাসকষ্ট হওয়াঃ অনেক কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। টিউমার ফুসফুসের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার জন্য, শ্বাসনালীতে চাপ দেওয়ার জন্য, ফুসফুসের চারদিকে পানি জমার কারণে, স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।


§ উল্লিখিত উপযুক্ত তিনটি উপসর্গ ছাড়াও আরও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে রোগী ডাক্তারের কাছে আসতে পারে। যেমন- বুকেব্যাথা, গলার লসিকা গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, গলার স্বরে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, জন্ডিস, হঠাৎ মূর্ছা যাওয়া, ফুসফুসের চারপাশে পানি জমা, বমি ভাব থাকে, ওজন কমে যায়, খাবারে অরুচি থাকে ইত্যাদি উপসর্গ নিয়েও রোগী হাসপাতালে আসতে পারে।




ü প্রতিকার:
রোগী ধূমপায়ী ও ৪০ বছরের বেশি বয়স হলে বা কোনো উপসর্গ দেখা দিলে (দীর্ঘদিন ধরে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া) অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত রোগ ধরা পরলে যে অংশ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে তা কেটে বাদ দিয়ে রোগ নিরাময় সম্ভব। তাছাড়া কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ। তাই সিগারেট খাওয়া কমালে বা বাদ দিলে ফুসফুসের ক্যান্সারের হারও কমবে।



Tuesday, June 11, 2019

স্পাইনাল ও অর্থোপেডিক সমস্যায় কী করবেনঃ

স্পাইনাল ও অর্থোপেডিক সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই রোগের চিকিৎসা এখন কমবেশি সব দেশে হয়ে থাকে তবে ভারতে অনেক খরচ কার্যকরে এ ধরণের রোগের চিকিৎসা করা হয়।
অর্থোপেডিক, ট্রমা ও দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরাই মূলত বেশি আসে স্পাইনাল ও অর্থোপেডিক সমস্যায়। দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরা বেশি সরকারী হাসপাতালে ছুটে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সরকারী হাসপাতালে সিট সংকুলানের অভাবে রোগীদের সেখানে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন তারা প্রাইভেট হাসপাতালের শরণাপন্ন হন।
এমন কোন কাজ আছে যা আপনি করে অভ্যস্ত নন সেই ধরনের কাজ হঠাৎ করলে হাঁড়ের উপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং ঠিক তখন থেকেই হাঁড় ক্ষয়জনিত সমস্যা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা বড় রকমের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিয়ম মাফিক চলাফেরাঃ

দীর্ঘ সময় ধরে কোনো চেয়ারে বসে একটানা কাজ করার ফলে কোমরের উপর চাপ পড়ে এবং এক
সময় প্রচুর ব্যাথা শুরু হয়। যে কোন মূহুর্তে আমাদের কিছু অসাবধানতার দরুন যে কেউ দুর্ঘটনার কবলে পরে থাকে। এই সমস্থ রোগীদের সুস্থ্য হওয়ার মূল কাজ হলো ব্যায়াম, আল্ট্রা সাউন্ড, ফিজিও থেরাপী, এবং অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে নিয়ম মাফিক চলাফেরা করলে অনেক রোগী কোনোরকম সার্জারি ছাড়াই সুস্থ্য হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।কিন্তু সমস্যা খুব চূড়ান্ত হয়ে গেলে দেরি না করে ভালো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন।


যারা বেশী ভোগেন রোগটিতেঃ


প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বেশী বয়স্ক মানুষ যারা ভারী কাজে অভ্যস্থ নন। গর্ভবতী মহিলাসহ অন্যান্য মহিলাদের মধ্যে যাদের বয়স ২০-৪০ এর মধ্যে হয় তারাই মূলত এসব রোগে ভোগে থাকেন। মূলত যে সব মহিলাদের বয়েস একটু বেশি যাদের, তাদের হাঁড়ে ক্যালসিয়াম কমতে শুরু করে এবং হাঁড় ক্ষয় হয়ে যায় এমন রোগীর সংখ্যা অনেক দেখা যায়।
নিরাময়ে কী করা উচিতঃ

শুধু ঔষধ সেবন দ্বারা স্পাইনাল ও অর্থোপেডিক সমস্যা থেকে নিরায়ম সম্ভব নয়। ঔষধ সেবনের সাথে সাথে নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। অনেকের আবার কিডনি ও গ্যাস্টিকজনিত সমস্যা থাকলে ব্যাথানাশক ঔষধ খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রথমেই রোগীর কিডনি ও গ্যাস্টিক জাতীয় সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানা দরকার এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে রোগীদের ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু যে কোনো রোগীর বারাবারি হওয়ার আগে শুরুতেই ভালো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা বাবস্থা পরিচালনা করার প্রয়োজন।




Friday, June 7, 2019

মেরুদন্ডের ব্যথার প্রধান কারণ ও সমাধানঃ


 মেরুদন্ডের ঘাড়, পিঠ ও কোমরের ব্যথার অভিজ্ঞতা কম বেশি আমাদের মধ্যে সকলের আছে। আঘাতহীন ব্যথার জন্য প্রথমে মেরুদন্ডে হালকা ব্যথা হলেও পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরের অন্য কোনো অংশে। সেই জন্য মেরুদন্ডের ব্যথায় সবার আগে প্রয়োজন সঠিক রোগ নির্ণয়। তা না হলে বাড়তে থাকবে রোগীর যন্ত্রণা।
 মেরুদন্ডের গঠন অনুযায়ী মাথার খুলির নীচ থেকে প্রথম ৭টি হাড় বা কশেরুকা নিয়ে ঘাড়, পরবর্তী ১২টি হাড় নিয়ে পিঠ, তার নিচের ৫টি হাড় নিয়ে কোমড় গঠিত।
 মেরুদন্ডের সমস্যায় ঘাড়ে যে সকল লক্ষন দেখা দেয়ঃ
• ঘাড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পরা
• হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিন-ঝিন করা
• ধীরে ধীরে হাত দূর্বল হয়ে হাতের কার্য ক্ষমতা লোপ পাওয়া
• দাড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
• প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা



 কোমরে ব্যথার লক্ষন সমূহঃ
• পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিন-ঝিন করা
• পায়ের বোধ শক্তি কমে আসা পর্যায়ক্রমে পায়ের অসারতা
• দাড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
• ধীরে ধীরে পা দূর্বল হয়ে পায়ের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া
• কোমড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া
• পায়ের নিতম্ব ও পায়ের মাংস পেশীতে ব্যথা
• চুড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা, এছাড়াও বসা ও দাড়ানো অবস্থায় পিঠে ব্যথা এবং পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে     
                                         
 নানান কারনে মেরুদন্ডের ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে। মেরুদন্ডের হাড় গুলির ভিতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কোন অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ঐ স্নায়ু মুলেও সেখান থেকে বেড়িয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরন ক্ষেত্রে ব্যথা হয়। এই ধরনের ব্যথা কে বলা হয় মেরুদন্ডের হাড়ের ক্ষয়। প্রকৃত পক্ষে মেডিক্যাল টার্মে এই জটিলতাকে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স / হার্নিয়েটেড ডিস্ক/ স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়।
 এই রোগে অতিরিক্ত যন্ত্রনায় রোগীরা সাধারণত ব্যথানাশক ঔষধের উপর নির্ভর করে সাময়িক ব্যথা মুক্তির চেষ্টা করে কিন্তু নিয়মিত এই ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়ার ফলে কিডনী বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ঘাড়, পিঠ ও কোমরের এই ব্যথা অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।