শারীরিক ছয়টি লক্ষণকে কখনোই অবহেলা করা ঠিক নয়।
এগুলো হলো-১. হাত এবং পায়ের দূর্বলতা, ২. বুকে ব্যথা, ৩. পায়ের পিছনে গরম এবং ব্যথা অনুভূত হওয়া, ৪. লালচে প্রস্রাব, ৫. শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, ৬.আত্মহত্যার প্রবনতা। এসব লক্ষণ হার্টের অসুখের ইঙ্গিত বহন করে।
এগুলো হলো-১. হাত এবং পায়ের দূর্বলতা, ২. বুকে ব্যথা, ৩. পায়ের পিছনে গরম এবং ব্যথা অনুভূত হওয়া, ৪. লালচে প্রস্রাব, ৫. শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, ৬.আত্মহত্যার প্রবনতা। এসব লক্ষণ হার্টের অসুখের ইঙ্গিত বহন করে।
হার্ট ব্লক কি?
শরীরের সর্বত্র রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে অক্সিজেনের জোগান দেয় হৃপিণ্ড। হৃপিণ্ডের নিজের পুষ্টিও আসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধমনির সাহায্যে। কোনো কারণে যদি এসব ধমনি বা করোনারি আর্টারি সরু হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে করোনারি আর্টারির স্টেনোসিস হয়েছে বা ব্লক হয়েছে বলা হয়। সাধারণত ধমনির গায়ে চর্বি জমে তা ক্রমেই সরু হতে থাকে এবং তা ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে হৃপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে থাকে এবং রোগী অল্প পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন।
হৃপিণ্ডের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা ও চিকিৎসাঃ
প্রাথমিকভাবে ইসিজি, ইটিটি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম করা হয় কিন্তু হার্টে ব্লক হয়েছে কি না বা হলেও কত শতাংশ এবং তা কী পর্যায়ে কোন অবস্থানে আছে, তা সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য করোনারি এনজিওগ্রাম করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে রোগীর স্টেন্ট/রিং পরানো সম্ভব কি না। সাধারণত যদি দেখা যায় ব্লকের সংখ্যা তিনের কম, রোগীর অন্যান্য ঝুঁকি না থাকে সেখানে এনজিওপ্লাস্টি বা প্রচলিত ভাষায় রিং পরানো হয়ে থাকে।
ANGIOGRAM/এনজিওগ্রাম : এক্স-রে’র মাধ্যমে শরীরের ধমনিগুলো দেখাকে এনজিওগ্রাম বলে। অবশ্য এজন্য ধমনির মধ্যে এক ধরনের ডাই (রঞ্জক পদার্থ বা কন্ট্রাস্ট মিডিয়া) প্রবেশ করানো হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এনজিওগ্রাম করা হয়, যেমন পায়ে পিএজি বা পেরিফেরাল এনজিওগ্রাম, মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে সেরিব্রাল এনজিওগ্রাম, কিডনিতে রেনাল এনজিওগ্রাম, হার্টে করনারি এনজিওগ্রাম (CAG)। আমাদের মনে রাখতে হবে, এনজিওগ্রাম একটি পরীক্ষার নাম, যার মাধ্যমে এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেনটিং বা রিং পরানো হয়।
করনারি এনজিওগ্রাম/CORONARY ANGIOGRAM(CAG) :
করনারি এনজিওগ্রাম হলো হার্টের রোগ নির্ণয়ের একটি পরীক্ষা, হার্টে করনারি আর্টারি ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হলে করনারি এনজিওগ্রাম পরীক্ষাটি করানো হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, করনারি আর্টারির মধ্যে কতগুলো ব্লক আছে বা ব্লকগুলোর অবস্থান কোথায় বা কত পার্সেন্ট ব্লক আছে। অনেকেই মনে করেন, করনারি এনজিওগ্রাম পরীক্ষাটি করার জন্য রোগীকে অজ্ঞান করতে হয়। ব্যাপারটি মোটেই তা নয়, এজন্য পায়ের মোটা ধমনি (Femoral artery) বা হাতের ধমনিতে (Radial artery) ক্যাথেটার (সরু প্লাস্টিক টিউব) ঢোকানোর জন্য চামড়ার নিচে লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে অবস করে নেয়া হয়।
এনজিওপ্লাস্টি/ANGIOPLASTY : এনজিও (Angio) শব্দের অর্থ হলো রক্তনালি এবং প্লাস্টি (Plasty) শব্দের অর্থ হলো ঢিলা করে দেয়া। এ পদ্ধতিতে রক্তনালির মধ্যের চর্বি জমে সরু হয়ে যাওয়া পথ প্রশস্ত বা ঢিলা করে দেয়া হয়। যে পথে এনজিওগ্রাম করা হয়েছিল সেই একই পথে ক্যাথেটারের সঙ্গে বেলুন প্রবেশ করানো হয়। তারপর ওই বেলুন ফুলিয়ে করনারি ধমনির সরু অংশকে প্রশস্ত করা হয়। এতে করে ধমনির ভেতরের রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক হয়। ধমনির এ প্রশস্ততা ধরে রাখতে স্টেন বা রিং বসানো হয়। যদি দেখা যায়, ব্লকের সংখ্যা তিনের কম (অনেক সময় তিনটিও করা হয়) এবং ব্লক ৭০ শতাংশের বেশি তাহলে সেখানে এনজিওপ্লাস্টি বা বেলুনিংয়ের মাধ্যমে স্টেন বা রিং প্রতিস্থাপন করা হয়।
স্টেনটিং বা রিং পরানো/STENTING :
এনজিওপ্লাস্টির পর ওই জায়গার প্রশস্ততা ধরে রাখতে ওই স্থানে রিং বসানোকে স্টেনটিং (Stenting) বলে। অনেকের ধারণা, স্টেনটিং বুক কেটে করা হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যে পথে এনজিওগ্রাম করা হয়েছে ওই পথেই এনজিওপ্লাস্টি করে স্টেনটিং বা রিং পরানো হয়। স্টেনটিং বা রিং পরানোর পরও ওই জায়গায় আবারও চর্বি জমতে পারে। তাই পরবর্তী সময়ে রক্তের চর্বি কমার ওষুধ, রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো খেয়ে যেতে হয়। দুই ধরনের স্টেন বা রিং লাগানো হয়ে থাকে। ড্রাগ এলুটিং স্টেন (এটি খুব দামি ও ব্যয়বহুল) এবং মেটাল স্টেন।
CABG বা বাইপাস সার্জারি বা করনারী আরটারী বাইপাস গ্রাফটিংঃ
প্রথমে এনজিওগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে করনারী আরটারির মধ্যে কতগুলা ব্লক আছে বা ব্লকগুলোর অবস্থান কোথায় বা কত পারসেন্ট ব্লকআছে। যদি দেখা যায় ব্লকের সংখ্যা তিন বা তিন এর বেশি (অনেক সময় তিনটাও করা হয়) এবং ব্লকের পারসেন্টেজ কখনো কোথাও ১০০% এবং সেখানে এনজিও প্লাস্টি বা বেলুনিং এর মাধ্যমে স্টেন বা রিং প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয় অথবা রক্তনালীর অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে আছে তখন সেখানে বাইপাস অপারেশান বা করনারী আরটারী বাইপাস গ্রাফটিং করা হয়। যা সাধারণত বাইপাস সার্জারি নামেই বেশি পরিচিত। এই অপারেশান এর প্রধান উদ্দেশ্য হল রক্তনালী বন্ধ হবার কারণে হার্টের যে অংশে রক্ত চলাচল কমে গিয়েছে অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই অংশে রক্তের যোগান নিশ্চিত করা। এই বাইপাস করার জন্য সাধারণত রোগীর নিজের পা, হাত, অথবা বুকের রক্তনালি ব্যবহার করা হয়। অপারেশান এর পর হসপিটালে থাকতে হয় ৭- ১০ দিন। বাইপাস সার্জারিতে সাধারণত ৪ থেকে ৬ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়ে থাকে।






No comments:
Post a Comment