Wednesday, March 6, 2019

কিডনি রোগ নিয়ে বিস্তারিতঃ

সাধারণত মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে। কিডনি পেটের ভিতরে, পিঠের দিকে, মেরুদন্ডের দু পাশে কোমরে অবস্থিত। কিডনি দেখতে সিম বিজের মত এবং আকারে হাতের মুঠোর মত হয় ।

কিডনির প্রয়োজনীয়তাঃ
-
কিডনি আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধন করে, শরীরে তরল ও ধাতবের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনি লোহিত রক্ত কনিকা তৈরিতে এবং হাড়ের সাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কিডনির রোগের লক্ষণ কিঃ
-
কিডনির রোগের লক্ষণ অনেক প্রকারের হয় আর তা রোগের প্রকার এবং গভীরতার উপর নির্ভর করে। সব থেকে বেশি দেখতে পাওয়া লক্ষণ গুলি হলো মুখমণ্ডল এর ফোলাভাব (বিশেষ করে সকালে), খুদামান্দা, বমিভাব, কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বলতা, মুত্রের পরিমান কমে যাওয়া, মুত্র ত্যাগের সময় জ্বলন বা অসুবিধা, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি ।

কাদের কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকেঃ
-
যে কোনো মানুষেরই কিডনির রোগ হতে পারে। তথাপি যারা অনেক দিন ধরে উচ্চ রক্ত চাপ বা diabetes এ ভুগছেন বা দীর্ঘ দিন ধরে যন্ত্রনা নিবারক ওষুধের সেবন করে চলেছেন তাদের কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বংশগত কিডনির রোগ থাকলে বা মুত্র নালীর জন্মগত কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
-
কিডনির রোগের নির্ণয় করার পরীক্ষাঃ
-
ডাক্তার বাবু রোগীর রোগের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। মুত্রের পরীক্ষা, সিরাম ক্রিয়েটিনিন এবং আল্ট্রা সনগ্রাফি দ্বারা পরীক্ষা হলো সর্বাধিক প্রচলিত বা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

কিডনি ফেলিউরঃ কিডনির পরিশোধন বা রেচন ক্ষমতা কমে যাওয়া কে কিডনি ফেলিউর বলে।
-
কিডনি ফেলিউরের নির্ণয় কিভাবে করা হয়ঃ সিরাম ক্রিয়েটিনি, Blood Urea Nitrogen এবং EGFR হলো সর্বাধিক প্রচলিত কিডনি ফেলিউর এর রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি।
-
কিডনি ফেলিউরঃ
-
কিডনি ফেলিউরে ভুগছেন এমন ব্যক্তির কি একটি কিডনি খারাপ হয় না দুটি কিডনিই একসাথে খারাপ হয়। দুটি কিডনিই খারাপ হলে তবেই কিডনি ফেলিউর হয়। সাধারণত যদি একটিমাত্র কিডনি পুরোপরি ফেলিউর হয়ে থাকে তাহলেও Blood Urea বা সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা স্বাভাভিক থাকে। কিন্তু যখন দুটি কিডনিই ফেলিউর হয়ে যায় তাহলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমতে থাকে ফলে blood urea এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেশি হয়ে যায়। রক্তের এই বর্ধিত মাত্রা কিডনি ফেলিউর এর নিদর্শন। যদি দুটির মধ্যে কেবলমাত্র একটি কিডনি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে কি কিডনি ফেলিউর হতে পারে না। যদি দুটি কিডনির মধ্যে একটি ফেলিউর বা অপসারিত হয় তাহলে অন্য স্বাভাভিক কিডনিটি শরীরের স্বাভাভিক কাজকর্ম ঠিক ভাবেই করতে পারে কারণ একটি মাত্র কিডনিই শরীরের স্বাভাভিক কাজকর্ম করার জন্য যথেষ্ট।
Acute কিডনি ফেলিউর এবং ক্রনিক কিডনি ফেলিউরঃ
-
Acute কিডনি ফেলিউরএ কিডনির কর্ম ক্ষমতা বিশেষ কারণে অল্প সময়ের জন্য ( কিছু ঘন্টা, দিন বা সপ্তাহ) বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। এই ধরনের কিডনি ফেলিউর অল্প সময়ের জন্যই হয় এবং পারে তা পুরোপরি ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে(কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে) ধীরে ধীরে পুরোপুরি ভাবে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াকে ক্রনিক কিডনি ফেলিউর বলে। ইহা আরোগ্য অসাধ্য রোগ যেখানে কিডনির কর্মক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে কমতে কমতে এক সময় পুরোপরি কাজ করতে বন্ধ করে দেয়। এই ঘাতক এবং জীবন নাশক অবস্থা কেই বলা হয় এন্ড ষ্টেজ কিডনি ডিসিজ।


ডায়ালিসিসঃ
-
যখন কিডনি কাজ বন্ধ করে দেই তখন ডায়ালিসিস হলো একটি কৃত্রিম পদ্ধতি যার সাহায্যে শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে নিস্কাশন করা হয়. এটি হলো একটি জীবনদায়ী পদ্ধতি কিডনি ফেলিউরের রোগীদের জন্য. দু ধরনের ডায়ালিসিস হয়- হিমোডায়ালিসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস।
-
কখন ডায়ালিসিস এর দরকার হয়ঃ
-
যখন কিডনির কর্মক্ষমতা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমে যায় (এন্ড স্টেজ কিডনি ডিসিজ- ESKD), কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিকাশ করতে পারে না ফলে বমি-বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট বা শরীর ফুলতে দেখা যায়. এমতাবস্থায় ডায়ালিসিসএর প্রয়োজন হয়. একজন ক্রনিক কিডনি ডিসিজএর রোগীর সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ৮ মি. গ্রা. প্রতি ডে. লি. বা তার বেশি হয় তখন ডায়ালিসিসএর প্রয়োজন হয়।
 কিডনি প্রতিস্থাপন এর প্রয়োজন কখন হয়ঃ
-
ক্রনিক কিডনি ডিসিজ এর রোগীদের কিডনির কার্য ক্ষমতা যখন ৮৫ থেকে ৯০ % কমে যায়, তখন কিডনি প্রতিস্থাপন এর প্রয়োজন হয়।
-
কোন কোন ব্যক্তি কিডনি দান করতে পারেনঃ
-
সুস্থ্য দুটি কিডনি যুক্ত মানুষ এবং যদি ব্লাড গ্রুপ, টিসু টাইপ যদি মিলে যায় তাহলে সেই ব্যক্তি কিডনি দান করতে পারেন. কিডনি দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬৫ এর মধ্যে হওয়া দরকার. পিতা মাতা বা সন্তান দের দান করা কিডনির প্রতিস্থাপন সবথেকে বেশি সফল হয়. যদি জীবিত কিডনি দাতা না পাওয়া যায় তাহলে মৃত ব্যক্তির কিডনির উপর নির্ভর করতে হয়।

ডায়াবেটিক কিডনীঃ
-
ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ এর ব্যাপারে জানা প্রয়োজন কেন
ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ (ডায়াবিটিক নেফ্রপ্যাথি) হলো ক্রনিক কিডনি ডিসিজ এর একটি মুখ্য কারণ. এন্ড স্টেজ কিডনি ডিসিজ এর নতুন রোগীদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর কিডনি খারাপ হবার কারণ হলো ডায়াবিটিস. সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ কে প্রতিরোধ করতে পারে।
-
ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ এর সাধারণ লক্ষ্মনঃ

মূত্রে প্রোটিন, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁটু, পা বা মুখ ফুলে যাওয়া, ইনসুলিনের প্রয়াজন কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন রক্তের শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়া।
-
ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ এর চিকিত্সাঃ
-
ডায়াবিটিক কিডনি ডিসিজ এর চিকিত্সার দুটি প্রধান পদক্ষেপ হলো ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের উপর নিয়ন্ত্রণ।



No comments:

Post a Comment