Tuesday, July 23, 2019

প্রোস্টেট ক্যান্সার কি? এর লক্ষণ, ঝুঁকি এবং চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

 প্রোস্টেট ক্যান্সার হল পুরুষদের অন্যতম কমন একটি ক্যান্সার। পুরুষদের যে প্রোস্টেট গ্রন্থিটি আছে, যেটি দিয়ে মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। মুত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালী বের হয়, সেটির চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এই গ্রন্থির ক্যান্সারকেই প্রোস্টেট ক্যান্সার বলে।
 পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সাধারণত ৫০ এর উপরে বয়স যত বাড়ে, পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বাড়তে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে এই ক্যান্সার পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারে মৃত্যুর কারণ। তাই নিয়মিত টেস্ট করানো অত্যন্ত জরুরী। 
                                                                         প্রোস্টেট ক্যান্সার এর কারণঃ

প্রোস্টেট একটি কাজুবাদামের সমান গ্রন্থি। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয় সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এই তরল পদার্থের মিশ্রণ।

 প্রসাব নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বও এই গ্রন্থির। কয়েক হাজার মাসল ফাইবার ব্যবহার করে এটা প্রস্রাবের প্রবাহ বাড়াতে, কমাতে পারে।                                           
 প্রোস্টেট ক্যান্সার সাধারণত গ্রন্থিময় কোষে শুরু হয়। এটাকে বলা হয় এডিনোকার্সিনোমা। এই ক্যান্সার হলে প্রোস্টেটের গ্রন্থি কোষের আকৃতিতে ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু হয়, যেটাকে বলা হয় প্রোস্টেটিক ইন্টারএপিথেলিয়াল নিওপ্লাসিয়া (PIN)। এটা খুব ধীরে ধীরে হয় এবং ক্যান্সারের বেশ অগ্রগতি না হলে বাহির থেকে বোঝা যায় না।
 ৫০ বছরের উপরে প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রোস্টেটিক ইন্টারএপিথেলিয়াল নিওপ্লাসিয়া আছে। হাই-গ্রেড প্রোস্টেটিক ইন্টারএপিথেলিয়াল নিওপ্লাসিয়া থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই সাথে সাথে আরও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা উচিত। তবে লো-গ্রেড প্রোস্টেটিক ইন্টারএপিথেলিয়াল নিওপ্লাসিয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেয়।
 প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়ে তাহলে ট্রিটমেন্ট করে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে এটি যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বেশ বিপজ্জনক হয়ে দাড়ায়। সাধারণত এটা হাড়ে ছড়ায়।
 প্রোস্টেট ক্যান্সার এর ঝুঁকির কারণঃ
 প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণটা অস্পষ্ট। তবে এর রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে বেশ কয়েকটা।
১) জেনেটিকঃ কারও জমজ ভাইয়ের যদি প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়, তাহলে তারও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারো পিতার যদি প্রোস্টেট ক্যান্সার থাকে, তাহলে অন্যন্য মানুষের চেয়ে তার এটা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি। তবে ভাইয়ের থাকলে পিতার তুলনায় প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২) বয়সঃ ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। সাধারণত এটা হয় তাদের যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি। বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততোই বেড়ে যায়।
৩) মেদবহুলতাঃ বেশ কয়েকটা স্টাডিতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, মেদবহুলতা এডভান্সড ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর হার বাড়ায়। এছাড়া মেদবহুলতার কারণে ক্যান্সার অনেকসময় এডভান্সড স্তরে চলে যায়।
 প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণঃ
 প্রস্টেট খুব ছোট একটা অঙ্গ। তাই প্রোস্টেট ক্যান্সার হলে প্রথমে সাধারণ কোনো লক্ষণ বুঝতে পারা যায় না। অনেকসময় ক্যান্সার হওয়ার কয়েক বছর পরেও কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না।
প্রোস্টেটটা বড় হয়ে যখন মুত্রনালিকে (যে টিউবটি মূত্রাশয় থেকে লিঙ্গ পর্যন্ত প্রস্রাব বহন করে) প্রভাবিত করে, তখন লক্ষনগুলো স্পষ্ট হয়। যখন এটা হয়, তখন নিচের লক্ষনগুলো সাধারণত দেখা যায়ঃ
১) ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়।
২) প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়, মাঝেমধ্যে বীর্যপাতের সময়েও।
৩) প্রস্রাবে বেগ থাকে না, প্রচুর সময় লাগে।
৪) প্রসাবের সময় রক্ত পড়ে।
 প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি এডভান্সড স্তরে চলে যায়, তাহলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারেঃ
১) হাড়ে ব্যথা, সাধারণত মেরুদন্ড, অন্ডকোষ, এবং পাঁজরে।
২) নিতম্ব বা তার আশেপাশে নতুন করে ব্যাথা দেখা দেয়া।
৩) লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।
৪) হাড়ে ফাটল ধড়া।
 প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি মেরুদন্ডে ছড়িয়ে পড়ে মেরুদন্ডকে সংকোচন করে দেয়, তাহলেঃ
১) পায়ে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
২) প্রসাব এবং বীর্যপাতের উপর কন্ট্রোল না থাকতে পারে।
 ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সবগুলো উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিকটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি ছড়ানোর আগেই ধরা পড়ে তাহলে প্রতিরোধ করা যায়। তবে এই লক্ষনগুলো হলেই যে আপনার প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়েছে তা না।
ডাক্তারি পরীক্ষাঃ
ডাক্তার যদি মনে করেন যে আপনার প্রস্টেট সমস্যা থাকতে পারে তাহলে আপনার মধ্যে কি কি লক্ষণ দেখা গেছে সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করবে। এর সাথে সাথে তিনি কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করতে পারেন। সাধারণত যেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ
১) রক্ত পরীক্ষা, একে সাধারণত পিএসএ পরীক্ষা বলে।
২) ডিআরই নামে এক ধরনের শরীর পরীক্ষা।
৩) রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা।
৪) ইউরোফ্লোমেট্রি বা মুত্রের প্রবাহ পরীক্ষা।
৫) আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে আপনি ব্লাডার বা মুত্রথলি কতোটা খালি করতে পারছেন।
 এডভান্সড পর্যায়ের চিকিৎসাঃ
 এডভান্সড ক্যান্সার বেশি আক্রমণাত্মক এবং এটা শরীরের অনেকাংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডভান্সড স্টেজে কেমোথেরাপি দেয়া হতে পারে। এটা ক্যান্সার সেলকে মেরে ফেলে।
 এন্ড্রোজেন ডেপ্রিভেশন থেরাপি (ADT) হচ্ছে একটি হরমোন ট্রিটমেন্ট যেটা এন্ড্রোজেন এর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। এন্ড্রোজেন হচ্ছে পুরুষদের একটি হরমোন যেটি ক্যান্সারকে বাড়তে উদ্দীপিত করে। ADT এন্ড্রোজেন এর প্রভাবকে কমিয়ে দিয়ে ক্যান্সারের বাড়া কমানো এবং এমনকি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে। রোগীদের সাধারণত লং-টার্ম হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হয়।
 যদি হরমোন থেরাপি কাজকরা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলেও অন্যান্য চিকিৎসার উপায় থাকতে পারে। তবে এজন্য আপনাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলা লাগবে।

 ভারতে চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনো ধরণের প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের সাথে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন।(মেডিকেল ভিসা , ডাক্তার এর এপয়েন্টমেন্ট, সেকেন্ড ওপিনিয়ন)







No comments:

Post a Comment